আমার যুদ্ধ

সুজয় দত্ত

                                     

আমার বাগানে ডালিম গাছেতে ফুল ধরেছিল কাল।
মধুলোভী যত ভ্রমর মাতায় তার সুবাসের রেশ।
হঠাৎ আকাশে উড়ে এল এক নির্মম মিসাইল —
তছনছ হল সাজানো বাগান, গল্প হলনা শেষ।
আমার বাড়ীর পাশ দিয়ে গেছে ছায়াছায়া বনপথ।
মুখরিত থাকে পাখীর কূজনে, শুনি কুহু আর কেকা।
হঠাৎ কী হল — সব চুপ। শুধু যান্ত্রিক এক ধ্বনি —
শত শত ড্রোনে ছেয়েছে আকাশ, সূর্য পড়েছে ঢাকা।
আমার গাঁয়ের পশ্চিম পারে কুলুকুলু নীল নদী
বয়ে যেত। তার জলেতে মরাল, রামধনু-রং মাছ।
একদিন শুনি মাইন পেতেছে কারা তার মোহনায় —
রণতরী আর ডুবোজাহাজের চলছে মৃত্যুনাচ।
সেই নদীতীরে দাঁড়িয়ে দুদিকে যতদূর যায় চোখ
দেখা যেত শুধু ধানক্ষেত আর সর্ষেক্ষেতের আল।
আজ সেথা শুধু গ্রেনেডের আর মর্টারের ক্ষতচিহ্ন —
মাটি খুঁড়ে নাকি বানিয়েছে ট্রেঞ্চ শত্রুপক্ষ কাল।
এমনি করেই চেনা পৃথিবীটা বদলে হয়েছে অন্য।
যুদ্ধ হচ্ছে আমাকে বাঁচাতে, আমারই ভালোর জন্য।
এত ভালো হায় সইবে কি শেষে? জয় করে নিতে বিশ্ব —
ফুল-নদী-বন পাখীর কূজন হারিয়ে হলাম নিঃস্ব।
তাই আমি আজ রণক্ষেত্রে সামিল হয়েছি নিজে।
ঝাঁপিয়ে পড়েছি শত্রুবিজয়ে, হাতে কবিতার অস্ত্র।
আমার শত্রু তারা, যারা এই পৃথিবীকে করে ধ্বংস —
ড্রোন-মিসাইল-বোমারুর ভয়ে থাকব না সন্ত্রস্ত।
আমার কবিতা বেয়োনেট হয়ে হিংসাকে করে বিদ্ধ।
ফ্লেম-থ্রোয়ারের আগুনে পোড়ায় শান্তির প্রতিবন্ধ।
আমার কামানে ভালবাসা ভরা, বন্দুকে বন্ধুত্ব —
মানবিকতার শক্তিতে রোখে পারমাণবিক দ্বন্দ্ব।

Top

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments


Copyright © 2023. All Rights Reserved.