তোকে নিয়ে একদিন কালহীন তেপান্তরে যাবো
কাজী মঈনুল হক
তুই তোর বিষাদগুলো সিন্দুকে তুলে রাখ্ —-
সুখগুলো দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখ্ —–
আমি তোর নিজস্ব সীমানা কোনোদিন ডিঙোতে যাবো না।
আমি শুধু একদিন বিকেলের রঙ দিয়ে তোর কপোল রাঙাবো
কিংবা অঝোর বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে
রংধনুর সাতটি রঙের সুর তোকেই শোনাবো।
কালের প্রবাহ শুধু গৎবাঁধা টিক্ টিক্ নয়,
এখানে পাথর থাকে, নদী থাকে, বাঁধের কাঠিন্য থাকে,
প্রতিশ্রুতি-প্রতারণা থাকে, স্বাস্থ্যবান সবুজের নিচে
পাতাঝরা কান্না থাকে, ভালবাসা-লালশাড়ি-উৎসবের ঘরে
নিঃসঙ্গ বারান্দা থাকে ——-
মানুষের তবু কত আকুল প্রস্তুতি!
রাখালের বাঁশি একদিন গিলে খাবে বটের শিকড়,
আয়নার কাচ থেকে মুছে যাবে কামনার চোখ, গোপন হাসির রেখা,
শাড়ির নিখুঁত ভাঁজ, কপালের টিপ; সময়ের অবহেলিত আঁচড়ে
চৌচির কাচের পটে আঁকা হবে কিউবিজমের আর্ট!
সময়ের ডাস্টবিনে ভুরু কুঁচকে নেড়ি কুকুরের মতো
এঁটোকাঁটা ঘাঁটাঘাঁটি খুব বেশি মানবীয় নয়,
তবুও লালসা থাকে বলে সরল হরিণগুলো পালায় জঙ্গলে,
হাসির জলেরা জমে গিয়ে হয় ধবল করাত,
রাক্ষসের সাথে রাজকুমারীরা সুখের প্রাসাদ গড়ে!
সাফল্যের দাম্ভিক কাদায় ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ শুনে
থমকে দাঁড়ায় দুরন্ত অশ্বারোহী!
আমি সময়ের এইসব আঁকাবাঁকা পথ ছেড়ে
তোকে নিয়ে যাবো একদিন
কালহীন তেপান্তরে — খরস্রোতা ভয়াল নদীতে প্রতিশ্রুতির নৌকোয়
তোকে চড়তে বলব না —- শুধু তুই যদি চাস্ তোর দুঃখের সিন্দুক
সেইখানে পুঁতে রেখে দিস পরম নির্ভয়ে। তারপর না হয় ফিরিস তোর
প্রাত্যহিক সময়ের পথে আর রক্তের ভিতরে
অনুভব করিস আবার জীবনের নিবিড় আগুণ।
সারা মুখ জুড়ে বৃষ্টিহীন ঘন কালো মেঘ ধরে রেখে
ঘড়ির কাঁটার একঘেয়ে টিক টিক শব্দ শোনা জীবনের গল্প নয় কোনো;
আমি বলছি না যে, আমি তোর ওষ্ঠ থেকে সব দুঃখ শুষে নেবো,
আমি কেবল বলছি যে, একদিন পুঁতে রাখা সিন্দুকের ডালা খুলে যাবে
আর নির্ঘুম একাকীত্বের রাতে দুঃখগুলো নক্ষত্রের আলো হয়ে তোর চোখে এঁকে দেবে নিবিড় কাজল।