মহুয়ার ঘ্রাণ
ফরিদ তালুকদার
কিছু পুরনো চিহ্ন, কিছু স্মৃতিকথা, রেখাটা মাঝামাঝি, দূরত্বেই লেখা
সীমান্ত, কাঁটাতার, মধ্যযুগীয় পরিখা, দুই নিঃশ্বাসের মাঝে তফাত…
এখন আমি এসবই পড়ি!
সংসার, সেও এক দূরুহ সমীকরণ বুঝি
দাগ পড়ে না দিনপঞ্জির কোনো পাতায়
ভাঙছি!—
ভেঙে পড়ছি আমরা রক্তের কণিকা থেকে কণিকায়
বিসর্গ থেকে বিন্দুতে চলছে আমাদের বিভাজন
আমরা ভাঙছি!—
ভাঙছি আমরা
ধর্মে, বর্ণে, গোত্রে, ঘর থেকে ঘরে
ভাঙছি স্বার্থের নিউরনে, মূল্যবোধে, মধ্য নিশীথের নীরবতায়, সকাল বেলার অযাচিত কোলাহলে…
ভাঙছি আমরা নিত্য, নিয়ত, সর্বত্র!
অথচ কোনোকিছুই তবু অচল নয়
বাতিল ঘোষিত তামার পয়সা, কাষ্ঠ হাসির নিচে জরাগ্রস্ত প্রাণ…
অদ্ভুত এক কলাকৌশলে চলছে, চলে যাচ্ছে
কনভেয়র বেল্টে রিসাইকল বিন থেকে উঠে আসা সারি সারি বাক্স, চলছে!—
বিজ্ঞাপন জ্বালা ধরায়
কতোটা কী চাই আমরা এক জীবনে!?
চাহিদার শত চাবুক পিঠে সবাই তো এখন
রেসের মাঠে খোঁড়ানো ঘোড়া
অথচ ছুটছি নিরন্তর!—
শরীরের পরে শরীর, তবু দুই মেরুতে পলাতক মন, সুখহীন রমণ স্মৃতি, যান্ত্রিক জলস্রোত, অবসাদ
কারণ!
কেন?
কোন প্রলোভন!?
একটু স্রোতে একটু টান
দু’ফোঁটা জল জানে পরস্পরে কেমন হয় গহীন অবগাহন
আমরা জানি না!
তীর্থ মুখী ঘাস জানে কতোটা তৃপ্তি আনে হেমন্ত শিশিরে স্নান
আমরা জানি না!
আমরা পরাজিত হই
সকাল-সন্ধ্যায় পরাজিত হই বিভাজনের ব্লাকবোর্ডে!
জারুলের শরীর বেয়ে নেমে আসে ঋতুবতী জোছনা
ঘুম ঘুম চিরল পথে কামিনীর ডাক
এখনো তো এরা কেউ রূপকথা নয়
এখনো তো তোর বুকের গিরিপথে এক খোয়াবী মন হাঁটে!
যদি হই হবো আরও অর্বাচীন
তবু চল—
ভালোবাসা লেখা হোক পুরনো ধারাপাতে
গাঢ় নিশীথের কোলে মাথা রেখে-
মিলনে মত্ততায় তুমুল, মহুয়ার ঘ্রাণে!