আমি হাসপাতাল থেকে বলছি
আশিস 

(তরুণ এই লেখকের লেখায় হাতখড়ি হচ্ছে। তাকে স্বাগতম লেখালেখির জগতে – সম্পাদক)

আগেই বলছি নামটা আমি পরে বলব।আমি কোন মানুষ নই, কিন্তু আমার নাম আছে। আমার জন্ম ১৯৪৬ সালে, যখন ভারত উপমহাদেশ ভাগ হয়ে তিনটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমাকে বানানো হয় আমেরিকান আর্মড ফোর্স হসপিতাল, যুদ্ধ শেষে পরে তারা আমার এখান থেকে চলে যায়।শুরুর দিকে মাত্র চারটি বিভাগ নিয়ে আমার যাত্রা শুরু হয়। মেজর উইলিয়াম জন ভার্জিন ছিলেন প্রথম প্রিন্সিপাল।

মানুষেরা জন্মের পরে কিছুদিন বিশ্রাম নিতে পারে কিন্তু আমার বেলায় তা নেই। প্রতিদিন কত যে লোক আমার কাছে আসে, আবার অনেকে হাসি মুখে চলে যায়, কিন্তু সবাই আবার তা পারে না।কাউকে কাউকে মনভরা দুঃখ নিয়ে আমার কাছ থেকে চলে যেতে হয়।এই তো সেদিন আব্দুর রহমান এসেছিল ক‍্যান্সার নিয়ে। আমার এখানকার ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল স্টুডেন্টরা সবাই মিলে চিকিৎসা দিয়ে তাকে সুস্থ করে তুলল। কিন্তু সবার ভাগ্য একরকম নয়, কাউকে কাউকে হয়তো আমার এখানে থেকে যেতে হয় লাশ হয়ে। মানুষেরা আমার এখানে হয়তো হাসতে আসে, আর না হয় কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে যায়।কারণ আমি তাদের সবাইকে বাঁচাতে পারি না।যা আমার এক আমরণ দুঃখ, মানুষেরা কাঁদে, আমি ও কাঁদি। তো আমার এখানে অনেক মানব শিশুরও জন্ম হয়, ওরা জন্মের পরে কাঁদে কিন্তু আমারা হাসি।ওদের বাবা মায়ের অনেক স্বপ্ন যেন ওদের নিয়ে। তা এভাবে হাসি-কান্না দুঃখ-সুখ নিয়ে আমি দ্বার খুলে সবার জন‍্য বসে থাকি। আমার এখানে অনেকে তাদের জীবিকাও নির্বাহ করে। তাদের প্রতিও আমাকে নজর রাখতে হয়। এছাড়াও অনেক দালাল, চোর, প্রতারককেও আমার দেখতে হয়, যাতে করে তারা যেন অন্যের ক্ষতি না করে। তা আমার মতো অনেক হাসপাতাল আছে এই পৃথিবীতে।

এখন বলব  এই  লেখকের এক ট্রাজিক ঘটনার কথা। সে তখন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, পরীক্ষা শেষে বাড়ি যাবে।হঠাৎ করে খবর এলো তার এক আত্মীয় মারা গেছে, সবাইকে তাই যেতে হবে। তো জানাযা শেষে আসার পথে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার আপন লোকগুলোকে হারিয়ে ফেলে। কাকতালীয় ভাবে সে সেদিন বেঁচে যায়। সে বোঝে না সে কি করবে, চরম প্রতিশোধের আগুন তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। কিন্তু কি করার? বিধাতার এটাই যে ইচ্ছা। তিনি তার বান্দাকে এভাবেই কাছে টেনে নেন। আজ হয়তো সে নিজে ও থাকতো না। আর হতো না এই লেখা আমাকে নিয়ে।হয়তো কোন একদিন তাকেও আসতে হবে আমার কাছে।এভাবে কেউ আসবে আবার কেউ চলে যাবে, শুধু আমি থাকবো অনন্ত কালের সাক্ষী হয়ে। না, হয়তো কোনদিন আমাকেও চলে যেতে হবে। ভেঙ্গে ফেলা হবে আমার শাখা প্রশাখাকে, আবার নতুন করে বানানো হবে আমাকে। জন্ম হবে আবার আমার, কিন্তু তোমাদের হবে না।

আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল।

Top

Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments


Copyright © 2023. All Rights Reserved.